গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী?

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী এগুলো নিয়ে আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় থাকি। কারণ আজকের দিনে যে সকল শিশু জন্মগ্রহণ করছে আগামী দিনে সে সকল শিশু আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়বে। সুন্দর পৃথিবী গড়তে এই শিশুদের ভূমিকা সবথেকে বেশি। আমাদের অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে,
গর্ভাবস্থায়-মা-ও-শিশুর-সুস্থতায়-করণীয়-কী
শিশুর কতটুকু যত্ন নেওয়া হচ্ছে বা দরকার? গর্ভাবস্থায় মায়ের কতটুকু যত্ন নেওয়া হলে শিশু সুস্থ ও সবল থাকবে এবং মানসিক ভাবে পরিপূর্ণ বিকশিত হবে। এটি আমাদের সকলের জানা উচিত তাছাড়াও বিশেষ করে মহিলাদের এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা অতি অবশ্যক। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কি কি আসুন তার জেনে নেওয়া যাক।

সূচি পএঃ

গর্ভাবস্থায় কয়েকটি বিপদ চিহ্ন

গর্ভাবস্থায় এমন একটি সময় এই সময় দুটি প্রাণ বাস করে একটি দেহে। গর্ভকাল বা গর্ভাবস্থায় অন্যান্য সময়ের থেকে অনেক আলাদা। প্রাচীনকাল থেকে জন্মদানের প্রক্রিয়া চলছে, বর্তমানে কালে ও এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় না। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার আমাদের দেশে সন্তান প্রসবের সময় বেশি ঘটে। বর্তমানে এই মৃত্যুহার আমাদের দেশে আগের তুলনায় অনেক কমেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য অথবা নির্মূল করার জন্য অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে বাংলাদেশ সরকার এর জন্য সরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পটি মোতায়েন করেছে, যাতে করে আমাদের সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর করনীয় কী এবং গর্ভাবস্থায় বিপদজনক সেগুলো কী?

হঠাৎ রক্তপাতঃ বিভিন্ন কারনে প্রসবের সময় ছাড়া ও গর্ভাবস্থার যেকোনো সময় রক্তপাত বা প্রসবের পর রক্ত ক্ষরণ করব ফুল যদি না পড়ে তাহলে তা বিপদের লক্ষণ। গর্ভাবস্থায় এরকম পরিস্থিতির শিকার হলে কোন প্রকার চিন্তা না করে দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন। যদি চিন্তাভাবনা করতে অধিক সময় ব্যয় করেন অন্যথায় এটি বাচ্চা ও মায়ের দুজনেরই জীবনেই হুমকি স্বরূপ হবে।

খিচুনির শিকারঃ গর্ভাবস্থায় কোন নারীর রক্তচাপ বা রক্তক্ষরণ যদি ২০ সপ্তাহ পরে ১৪০/৯০ বা এর বেশি হয় এবং প্রসাবের সঙ্গে বের হয়, তাহলে একে বলে প্রি-এক্লাম্পসিয়া। ফলে এক সময় এই এই সমস্যা গর্ভাবস্থার খিচুনি হিসেবে ধরা দিতে পারে। এই সমস্যাটি খুবই গুরুতর বা মৃদ ও হতে পারে। রক্তচাপ বা রক্তক্ষরণ খুব বেশি যেমন ১৬০/১১০ এর কম হয় তাহলে এটি মৃদু হিসেবে গণ্য হবে তবে এটি যদি ১৬০ ডায়াস্টেলিক এর অধিক হয় তাহলে এটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে গণ্য হবে। আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় থাকি এই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী। এইসব সমস্যাটি সাধারণত ২০ বছরের কম বয়সী তরুণী বা ৩৫ বছরের বেশি যাদের পরিবারে এই সমস্যাটি পূর্বে ছিল,
আরো পড়ুনঃ
জমজ বাচ্চা, ডায়াবেটিস, রক্ত জমাট, ওজন খুব বেশি তাদের এই জাতীয় সমস্যা সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ সমস্যাটি হলে কিডনির বিকল হতে পারে, সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে। এই সমস্যার জটিলতা খুবই গুরুতর এই সমস্যা ঘটলে অপুষ্ট নবজাতক জন্মগ্রহণ করে, বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত কমে যায়, শিশুর শ্বাসকষ্ট সমস্যা জনিত জটিলতা দেখা যায়। শতকরা ২৫ শতাংশ নারীর গর্ভাবস্থায় এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। শুধুমাত্র প্রি-এক্লাম্পসিয়ার প্রতিরোধ না করার ফলে আমাদের দেশের শতকরা মৃত্যুর হার ২০% শুধু একটি কারণে ঘরে থাকে।

জ্বর হলেঃ জ্বর হচ্ছে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের প্রক্রিয়া। কোন রোগ বা ইনফেকশন হলে তার লক্ষণ হিসেবে আমাদের জ্বর এসে থাকে। গর্ভাবস্থায় জ্বর বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা যদি দেহে থাকে তাহলে শিশুর ওপর এটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় এটি কারণে অনেকে ঘাবড়ে থাকে, এই সমস্যার সম্মুখীন হলে ঘাবড়ে না গিয়ে জ্বর কমানোর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন জ্বর না আসলেও অনেকের গরম লাগতে পারে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন হরমোন গুলোর প্রভাবে ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে কি সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় থাকা লাগেন আপনার জ্বর এসেছে কিনা এটি বুঝতে পারা একটু কঠিন হয়ে থাকে। যদি এমন সমস্যা সম্মুখীন হন তবে বাসায় থাকা থার্মোমিটার দিয়ে দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিবেন। অথবা যদি জ্বর আসে আপনার এগুলো লক্ষণ লক্ষ্য করতে পারবেনঃ
  • শরীর দুর্বল লাগতে পারে
  • হঠাৎ শীত শীত লাগতে পারে
  • শরীরে কাঁপুনি হতে পারে
  • গা গরম লাগতে পারে
  • শরীরে কাঁপুনি হতে পারে
  • উজ্জ্বল বর্ণের হলে ত্বক লালচে দেখাতে পারে
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হতে পারে
  • ঠান্ডা লাগার কিছুক্ষণ পর আবার গরম লাগতে পারে
গর্ভাবস্থায় জ্বর আসলে ঘাবড়াবেন না, আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় থাকি এই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী। জ্বর যদি এক দিনের বেশি সময় থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। জ্বর যদি ১০২° বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। জ্বর কমাতে ঘরোয়া ভাবে কিছু পরামর্শ মেনে চলতে পারি। যেমনঃ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার ও পানি পান করতে হবে, খুব বেশি পানি পান করবেন না আবার খুব কম পানি পান করা যাবে না এমন ভাবে পানি পান করতে হবে যেন পোশাক হালকা হলুদ ও স্বচ্ছ বর্ণের হয়, ঢিলেঢালা ও পাতলা কাপড় পরিধান করবে এর ফলে আপনার শরীরে বাতাস চলাচল করবে, যদি আপনার কাপুনি বা ঠান্ডা লাগে তাহলে পাতলা কাক চাদর গায়ে দিবেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় ভিজিয়ে সেটা চিপে কপালে দিতে পারেন এটি অনেকই জলপটি হিসেবে চিনে থাকেন। এগুলো ঘরোয়া কিছু পরামর্শ মেনে শরীরের তাপ খুব জ্বর কমিয়ে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশু ও মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করবেন।

গর্ভাবস্থায় কোন ভিটামিন খাওয়া দরকার, কোনটা নয়

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী? আবার কোন ধরনের ভিটামিন মায়ের সুস্থতা ও নবজাতকের হাড়, দাঁত মজবুত করে নিখুঁত গঠনে কাজ করবে এসব নিয়ে চিন্তিত থাকি। সাধারণত মানুষের দৈহিক গঠন ও কাজ সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন লবণের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের দেহে বয়স ভেদে বিভিন্ন সময় এ সকল ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয় ফলে দেহে বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন গ্রহণ করে থাকি, এর মধ্যে অনেক ভিটামিন রয়েছে যা সেবন করলে মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে। অতএব আমাদের সকল ভিটামিন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় যেসব ভিটামিন গ্রহণ করা যাবে সেগুলো হলোঃ ভিটামিন সি, ওমেগা–৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, ভিটামিন-ডি, আয়রন, আয়োডিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম। সকল ভিটামিন গ্রহণের ফলে রক্ত তৈরি হয়, জন্ম ত্রুটি প্রতারিত করে। নবজাতকের দাঁত ও হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে ও মায়ের ক্যালসিয়ামের চাহিদাও  পূরণ করে থাকি। আয়রন রক্ত কণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। আয়রন না পাওয়ার কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে। এর মধ্যে কিছু ভিটামিন রয়েছে যেগুলো হজমের সহায়তা করে আবার কোনটি রয়েছেন যেগুলো নবজাতকের ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এইগুলো ভিটামিন আমাদের দেহের জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনি গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় যেসব ভিটামিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবেঃ ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী? কি খাওয়াবেন ভিটামিন সেবন করাবেন ও বিরত রাখবেন, তাদের জন্য এটি যেন অবশ্য। ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই এই দুই ভিটামিন গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভিটামিন এ এর পরিমাণ যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে শিশু বা নবজাতক জন্ম ত্রুটি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে। এবং মায়ের মারাত্মক ক্ষতি যেমন লিভার নষ্ট হতে পারে। সাধারণ মানুষ বা নবজাতক শিশুর দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করার জন্য ভিটামিন এ অবশ্যক। কিন্তু সন্তান ও মায়ের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকি এটি কারনে ফলে এটি সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাবার থেকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ভিটামিন ই খাওয়া করো নাই অস্বস্তিকর পেট ব্যথা হতে পারে। যার ফলে কথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরে ভিটামিনের চাহিদা বেশি থাকে, ওই সকল ভিটামিন এর ঘাটতি আমরা দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমে পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করবো।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত

একজন মহিলার সবচেয়ে প্রাপ্তি বা জীবনের সব থেকে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে গর্ভবতী হওয়া। গর্ভাবস্থা কালীন পরিবারের দায়িত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ থাকার দরকার। এই সময় গর্ভাবস্থায় থাকা নারী ও তাদের পরিবার দুশ্চিন্তায় থাকে যে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করনীয় কি বা কোন খাবারগুলো খেতে হবে কোন খাবারগুলো বেরিয়ে চলতে হবে এইসব নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত থাকেন। গর্ভাবস্থা থাকাকালীন সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন যে সব খাবার খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী নিজের দৈনন্দিন খাবারের তালিকা করতে পারেন।

গর্ভাবস্থা থাকাকালীন আপনার খাবারের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এগুলো খাবার আপনার শরীরের যেমন ক্ষতি করে তেমনি বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তো খাবার গুলি হলোঃ মুরগির মাংস, দুধ এবং দই, পেঁপে, অপরিষ্কার শাকসবজি বা ফল,কাঁচা ডিম, আঙ্গুর,হারবাল চা, রাস্তার খবর, লবন যুক্ত খাবার, এলকোহল ইত্যাদি জাতীয় খাবার গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন কি খাবার গুলো কি দিয়ে চলতে হবে কিছু খাবার যেমন রান্না না করা মাংস,  আচ্ছা সামুদ্রিক খাবার এবং দুগ্ধ যাত খাবার পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় থাকা কালীন মায়ের দেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় মাছ কম বেশি না খেয়ে থাকি অনেক মাছের মধ্যে ক্ষতিকার পদার্থ থেকে থাকে। যেমন হাঙ্গড়, কিং ম্যাকেরেল এবং র্সোড ফিশ এর মতো কিছু মাছের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে পারদ থাকতে পারে। এ সকল পারদ শিশুর বিকাশের স্নায়ুতন্ত্রের অপর প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বা লিস্টেরিয়া, ডেলিমিট, নরম পনির, রেফ্রিজারেটরের সামদ্রিক মাছ এগুলোতে লিস্টেরিয়া থাকে। এসব গ্রহণের ফলে মৃত্যু, দ্রুত সংক্রমণ, নবজাতকের গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। সাধারণ জীবনে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য অ্যালকোহল সেবন প্রাণঘাতী হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় থাকা কালীন অ্যালকোহল বা ধূমপান গ্রহণে নবজাতকের জন্মের ছুটি সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময় আমরা না ধুয়ে বা পরিষ্কার করে ফল খেয়ে থাকি, সবজি খেয়ে থাকি যার ফলে পরজীবী সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে যা গর্ভাবস্থার ক্ষতিকারক হিসেবে ধরা দিতে পারে। ক্যাফিন যুক্ত খাবার খেলে গর্ভপাত ওজন কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ক্যাফিন যুক্ত খাবার যেমন, চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের দিক খেয়াল রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের দৈনন্দিন তালিকায় যোগ করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা বা লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় একটি উত্তেজনা পণ্য যাত্রা এরা সকল নারীর জীবনে এসে থাকেন। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন বিশেষ করে প্রথম এক মাসের লক্ষণ গুলি লক্ষ্য করতে শুরু করে। বিশেষ করে লক্ষণ গুলি বোঝার ক্ষেত্রে কিছু পথ বা কিছু মাধ্যম রয়েছে যা এই সময়কালীন আরো সহজ সচেতনতার সাথে সাহায্য করে।
  • প্রাথমিক গর্ভাবস্থার লক্ষণঃ মিস পিরিয়ড বা পিরিয়ড স্বাভাবিক সময় না হওয়া গর্ভাবস্থার প্রাথমিক বা প্রথম লক্ষণ। আপনার যদি পিরিয়ড স্বাভাবিক চক্রে স্বাভাবিক নিয়মে হয় এবং পিরিয়ড মিস হয় তবে সেটি আপনার প্রেগনেন্ট বা গর্ভাবস্থায় লক্ষণ হতে পারে। আবার মর্নিং সিকনেস যা আমরা সাধারণভাবে বমি বমি ভাব বলে জানি। গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে এটি একটি সাধারণ বা প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। আমরা দৈনন্দিন জীবন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে পার করি। গর্বস্থায় থাকাকালীন স্বাভাবিকভাবে ক্লান্তি বোধ টা বেড়ে যায়। এই সময় কাজ না করলেও থেকে ক্লান্তিবোধ টা বেশি অনুভব করা যায়।
  • প্রথম মাসে শারীরিক পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় নিয়ে আমাদের সকলের চিন্তাধারা সাধারণ সময় থেকে বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন প্রথম মাসে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে যার ফলে স্তন নরম বা কোমল হয়, স্তন  ফুলে যায় ঘা ও হতে পারে। গর্ভাবস্থার সময় জরায়ু প্রসারিত তুমি শুরু করে। যার লক্ষণ হিসেবে  বারবার বাথরুমে যেতে হয়।
  • মানসিক এবং মানসিক লক্ষণঃ গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মহিলাদের দেহে হরমোন উঠানামা করে থাকে ফলে তাদের মেজাজের পরিবর্তন ঘটে থাকে। সাধারণ জীবনে যেমন আনন্দ বা উচ্চতর আবেগ অনুভব করা অস্বাভাবিক নয় তেমনি গর্ভাবস্থায় এর প্রভাব আরেক তীব্র হয়ে ওঠে। গর্ভাবস্থা থাকাকালীন গন্ধের বর্ধিত সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি ও বা নষ্ট হয়ে থাকে। এই বর্ধিত সংবেদনশীলতার কারণে কখনো কখনো অনেক প্রিয় বা পছন্দের গন্ধের কারণে বমি বমি ভাব আসতে পারে। ফলে ওই সকল খাবার বা গন্ধের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে পারে যা পূর্বে আপনার প্রিয় বা আনন্দদায়ক ছিল।

গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসের সতর্কতা বা লক্ষণ

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস গর্ভাবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই শেষ তিন মাস মায়ের শারীরিক ও মানসিক উভয়দিকে বিশেষ বিবেচনা ও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনি দ্বিতীয় তিন মাসের সময় যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সে সকল সমস্যা শেষ তিন মাসেও অব্যাহত থাকবে, এতে ঘাবড়ানোর কোন কিছু নেই। । অনেক সময় সন্তান সম্ভবা মায়ের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং  জরায়ু বড় হওয়ার কারণে ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়। কারণ হচ্ছে সন্তান-সম্ভব যে মা রয়েছে তার পেটের বাচ্চাটি দিন দিন বড় হচ্ছে ও ওই সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোতে চাপ দিচ্ছে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই আপনার সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে এই সমস্যা গুলো সন্তান জন্মের পর ধীরে ধীরে কমে যাবে। এই শেষ তিন মাস যে সব গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা হলোঃ 
আরো পড়ুনঃ
সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে এগুলো সমস্যা হয় না, কিন্তু শেষের তিন মাসের সময় আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারবেন।
  • ঘুমের সমস্যা
  • নাভি ছড়িয়ে যাওয়া
  • বুকজ্বালা
  • আঙ্গুল, মুখ এবং গোড়ালি ফুলে ওঠা 
  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া
  • রক্তক্ষরণ
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা

গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন যেভাবে নিবেন

প্রথম তিন মাসে যে সমস্যাগুলো হয়ে থাকে তার থেকে বেশি অস্বস্তি ও কষ্ট বেশি হয়ে থাকে শেষের তিন মাসে। আপনার সন্তান যেহেতু ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ মেয়াদে পৌঁছে গেছে সেহেতু প্রথম তিন মাসের তুলনায় শেষের তিন মাস আপনি বেশি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। এ সকল সমস্যা বা অস্থিরতা ঘন ঘন হতে পারে, এসব অস্বস্তিগুলো সামলাতে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ সকল অস্থিরতা দূর করতে হবে।
  • গর্ভ অবস্থায় থাকাকালীন বুকজ্বালার-পোড়া ঘটতে পারে, সেক্ষেত্রে খাদ্য অভ্যাস ও জীবন পরিচালনার চক্রকে পরিবর্তন করতে হবে। পরিবর্তন সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য অবশ্যই বিশেষকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি তাও উপকার না হয় তাহলে এটি প্রশমনের জন্য এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থা থাকাকালীন আপনার ঘুমে। শসমস্যা করে এমন স্থান ত্যাগ করতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম এর ঘাটতি দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। পুরো শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার সময় উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করে শুধুমাত্র ঐ সকল স্থানে বালিশ ব্যবহার করার চেষ্টা করে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করা

মানবদেহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীনও এর বিকল্প নেই। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন এটি ব্যক্তির দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ও সাধারণ সময়ে থাকাকালীন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যেমনঃ প্রতিদিন খাবারের আগে উপরে পানি পান করতে হবে, প্রতিবার টয়লেট ব্যবহার করার পরে পানি পান করতে হবে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে মা ও শিশুর যেসব উপকার হয়। তার নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে আমাদের দেশের হজম শক্তি বৃদ্ধি করেন। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ও হজম প্রক্রিয়া সহজ করে তুলে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার ফলে দেহের প্রতিটি অঙ্গ পতঙ্গে পুষ্টি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার জন্য মশ্চারাইজড করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন যদি বমি বমি ভাব বমি হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পানি পান করতে সমস্যা হয়, তাহলে অল্প পরিমাণে পানি বার বার পান করুন। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভাবস্থায় সন্তানের বুদ্ধি বিকাশে দুধের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মায়ে দুধ পান করলে সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন আপনি এমন সময় পার করেন যখন আপনি সবকিছু নিয়ে একটু খুঁত খুঁতে হয় যান। গর্ভকালীন সময় খাবারের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে দুধ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। গর্ভকালীন সময়ে অনেকেই দুধ খাওয়া নিয়ে একটু সন্ধিহান থাকেন। এটারও গ্রামাঞ্চলে কিছু পুরনো কথাবার্তাও থাকে যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই এই সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সব থেকে বড় উৎস হচ্ছে দুধ। গর্ভকালী সময়ে মায়ের ১০০-১৩০০ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয় যা ৫০০ লিটারের বেশি দুধে থাকে। দুধ গর্ভে থাকা সন্তানের মিনারেল চাহিদা পূরণে সহায়ক। এইজন্য গর্ভে থাকা সন্তানের পুষ্টি উপাদান ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করতে নিয়মিত দুধ পান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভকালীন সময়ে মা যদি পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পান করে তাহলে গর্ভের বাচ্চার ভবিষ্যতে ২ টাইপ ডায়াবেটিস হবার প্রবনতা কমে যায়। দুধের মধ্যে আয়রন উপাদান থাকে যা আপনার গর্ভের বাচ্চার ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এ বড় ভূমিকা পালন করবে। গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত দুধ পান করলে মায়ের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া শরীরে তরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন করে এই দুধ। একি সাথে গর্ভকালীন সময়ে ফ্লুয়িড এর ঘাটতি ও পুরন করা হয় পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পান করে। নবজাতকের জন্মের কিছু দিন পর অনেক সময় হাড়ের কিছু সমস্যা দেখা যায় যার অন্যতম কারন থাকে ভিটামিন ডি। গর্ভাবস্থায় যদি মা নিয়মিত দুধ পান করেন তাহলে গর্ভের সন্তান সেখান থেকে ভিটামিন ডি পেতে থাকে যা পরবর্তীতে তার হাড় গঠনে বেশ বড় ভূমিকা রাখে।

সন্তানের বুদ্ধি বিকাশে সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করা

গর্ভাবস্থা থেকেই সন্তানের বুদ্ধি বিকাশে শাক সবজি গুরুত্বপূর্ণ। শাক-সবজি তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অক্সিডেন্ট এবং খনিজ থাকে যা মস্তিষ্কের সঠিক ভাবে বিকাশের সহায়তা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শাক-সবজি হলো পালং শাক, লেটুস পাতা ও ব্রকলি বিশেষভাবে উপকারী। গর্ভাবস্থা থেকেই সবুজ শাক-সবজি যে সকল মা গ্রহণ করে থাকে, তাদের দেহে ফলিক এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণ করে। নবজাতকের মস্তিষ্কের কোষ উন্নত করে এবং ত্রিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। সবুজ শাকসবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে মস্তিষ্কের রোগ গুলির ঝুঁকি কমায়। ফলিক এসিড স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বজায় রাখে ও বিভাজনের সহায়তা করে। সুষম খাদ্য এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য নিয়মিত সবুজ খুবই জরুরী।

শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কী?

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুস্থতায় করণীয় কি সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবে অবগত হয়েছেন ও ধারণা লাভ করেছেন। মা ও শিশুর সুস্থতার দিকে গর্ভধারণের প্রথম মাস থেকে নবজাতকের জন্ম হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। কারণ নবজাতকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভধারণ কৃত মায়ের শরীরের দিকে যত্নবান হতে হবে। সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী নতুন খাবার তালিকা ও দৈনন্দিন জীবনধারণ পরিচালনা করতে হবে। তবে আপনি গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মা ও শিশু সঠিক যত্ন নিতে পারবেন যা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নোন ফ্যাক্ট ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url