আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী, জমির দলিল এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
আইনগত ডকুমেন্টস। জমির দলিল হচ্ছে এমন একটি ডকুমেন্ট যার মাধ্যমে আপনারা আপনাদের
সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণ করতে পারেন। যদি আপনার জমির দলিল না থাকে তাহলে
আইনগতভাবে আপনি অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবেন। জমির দলিল বা দলিল হচ্ছে
একটি অক্সিজেন যা সম্পত্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষিত এবং প্রত্যয়নপত্র সহ
জমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য সকল তথ্য বিবরণী রক্ষা করে।
এটি হচ্ছে মৌলিক ও মূল স্বাক্ষর বলে মনে করা হয়ে থাকে যার উপর জমির সাইজ,
মালিকের নাম গাড়ির নাম দায়িত্ব সম্পর্কিত তথ্য এবং অন্যান্য বিবরণ সংক্রান্ত
তথ্য দেওয়া থাকে। জমির দলিল লেখার জন্য সরকারি কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
এ সকল তথ্য বাংলাদেশ সরকার তার ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে।
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা জমির দলিল লেখা সরকারি নিয়ম, আছিয়ানামা, হেবা দলিল
এবং অন্যান্য দলিল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবো।
পেজ সূচিপএঃ আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম
জমির দলিল কি?
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী, দলিল হচ্ছে যেকোনো চুক্তি লিখিত
ও আইনগ্রাহ্য রূপকে বোঝাই। জমি জমা ক্রয়-বিক্র এবং হস্তান্তরের জন্য আমরা
সাধারণত দলিল ব্যবহার করে থাকি। দলিল শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহার হলেও যেকোনো
চুক্তির ক্ষেত্রে দলিল শব্দটি প্রয়োগ করা যায়। জমির দলিল হচ্ছে একটি আইনি
চুক্তি যার মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তি বা জমি মালিকের কাছে সুরক্ষিত থাকে। জমির
দলিল সাধারণত লিখিত ভাবে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। এতে জমি ক্রয় ও বিক্রয়
দাতার মালিকানা বিবরণ ও হস্তান্তরের শর্তাবলী উল্লেখ করা থাকে। প্রতিটি জমির
দলিল আইনিভাবে রেজিস্ট্রি করা হয়ে থাকে। যার ফলে এটিকে আরো শক্তিশালী ও আইনগত
বৈধতা প্রদান করে থাকে। সাধারণত জমির রেজিস্ট্রি করা হলে অন্যান্য অধিকার
প্রতিষ্ঠা করার সহজ হয় এবং ভবিষ্যৎ মালিকানা সংক্রান্ত প্রতিরোধ এরানো সম্ভব
হয়। প্রতিটি জমির জন্য জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক।
প্রতিটি জমি রেজিস্ট্রেশন দলিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কার্যকর হয়ে থাকে।
জমি দলিল রেজিস্ট্রি করার ফলে দলিলের সত্যতার নিশ্চিত করা হয়। দলিল
রেজিস্ট্রেশন করার ফলে এর আইনি কার্যকরিতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জমির দলিল
রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় বা সাব রেজিস্টার অফিস থেকে কিছু
নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতি প্রদান করা হয়ে থাকে। জমি রেজিস্ট্রেশন করতে
হলে অবশ্যই বিক্রয়কৃত জমির পূর্ব ও পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ থাকা আবশ্যক। দলিলে
জমি দাতার পূর্ণ ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম এবং সাম্প্রতিক ছবি সংযুক্ত করতে
হবে। দলিলে বিগত ২৫ বছরের মালিকানাসংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও কার কাছ থেকে
কে কিনল, সে বিবরণ লেখা থাকতে হবে। যিনি জমি বিক্রয় করবেন, তার নামে অবশ্যই
উত্তরাধিকার ছাড়া নামজারি থাকতে হবে। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য, সম্পত্তির
চারদিকের সীমানা, নকশা দলিলে থাকতে হবে।
যিনি কিনছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে এই জমি বিক্রি করা হয়নি মর্মে হলফনামা
থাকতে হবে। জমির পর্চাগুলোতে সিএস, এসএ, আরএস মালিকানার ধারাবাহিকতা (কার পরে
কে মালিক ছিল) থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে বায়া দলিল সংযুক্ত করতে হবে। দলিল
রেজিস্ট্রি করা হয় রেজিস্ট্রেশন আইন, স্ট্যাম্প আইন, আয়কর আইন, অর্থ আইন ও
রাজস্বসংক্রান্ত বিধি এবং পরিপত্রের আলোকে। সব দলিলের রেজিস্ট্রি ফি সমান নয়।
সরকার বিভিন্ন সময় সমসাময়িক বিবেচনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রি ফি নির্ধারণ করে
থাকে। আয়কর আইনমতে, ভ্যাট ও উৎস কর সব সময়ই জমির বিক্রেতা প্রদান করবে,কর
দেওয়ার নিয়ম, এ দুই ধরনের করের পরিমাণ বিক্রেতার আয়ের ওপর নির্ভর করবে। এই কর
বিক্রেতার নামে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। উৎসে কর ও ভ্যাট ছাড়া অন্য সব
ধরনের কর জমির ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হবে। ২০০৪ সালের নতুন রেজিস্ট্রেশন
আইন সংশোধন করার পর মৌখিক দান বৈধ নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির সব
সম্পত্তি বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অবশ্যই দাদার নাম জারি করতে হবে।
হেবা দলিল কি?
ভূমি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ধরনের দলিলে উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো হেবা দলিল। মুসলিম আইন অনুযায়ী কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া স্বেচ্ছায় বা
নিজ ইচ্ছায় কোন সম্পত্তি অন্য ব্যক্তিকে দান করার দলিল হিসেবে পরিচিত। মুসলিম
আইন অনুযায়ী এই দান হতে হবে শর্তবিহীন। উক্ত সম্পত্তি দান করার
ক্ষেত্রে দাতার কোন প্রকার দাবি থাকলে দানপত্র অশুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং
তা বাতিল যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ সকল দলিল যদি রেজিস্ট্রি হয়ে যায়
দাতা শত চেষ্টা করলেও তা আর ফেরত নিতে পারেন না। এরূপ দলিলে দাতার কোনরূপ
স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে না। হেবা বিল বা দলিল মুসলিম সম্প্রদায়ে একটি
দানপত্র দলিল হিসেবে পরিচিত। কারণ দান করার ক্ষেত্রেও দাতার সন্তুষ্ট হয়ে
দান করতে হয়। তো হেবা দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি হতে হবে। হেবা দলিলের ধমে
বিভিন্ন বস্তু দান করা যায়। দৃশ্যমান সম্পত্তির সঙ্গে যোগ্য দাবি ও ওয়ারিশ
সম্পত্তি সমানভাবে হেবার বিষয়বস্তু বলে গণ্য হবে। যেমনঃ বিনিময়পত্র অথবা
সরকারি প্রতিজ্ঞা পত্র। ভাড়া বা লিজের জমি, মালিকানা অধিকার বা স্বতৃ এবং
ক্রোককৃত সম্পত্তি। বীমা পলিসির টাকাও দান করা চলে। পীরের দরগায় প্রদত্ত
শিরনির নির্দিষ্ট অংশ।
অছিয়তনামা দলিল
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বা ধর্ম অনুসারে কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় তার
সম্পত্তির বা জমির মালিকানা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত তার মৃত্যুর পর কার্যকর
হবে। এই প্রকার আইন সম্মত দলিল সিদ্ধান্ত মূলক পএকে অছিয়তনামা দলিল বলে।
সাধারণত অছিয়তনামার কাজ সম্পাদনের জন্য ও উক্ত ইচ্ছা পূরণের জন্য একজনকে
দায়িত্ব প্রদান করা হয়, যিনি অছিয়তনামার পরিচালক হিসেবে পরিচিত।অছিয়তনামার
মধ্যেমে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি ও সম্পত্তির
বিভিন্ন মুনাফা কিভাবে তার ওয়ারিশ এর মধ্যে তা তার মৃত্যুর পূর্বে লিখে বা
মৌখিক নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন হলো অছিয়তনামা। বর্তমানে এই ধরনের দলিলের
প্রচলন নেই বললেই চলে।
অছিয়তনামার বৈশিষ্ট্যঃ অছিয়ত নামা অছিয়তকারীর মৃত্যুর পর কার্যকরী
হয়। উইলকে মুসলমান শরীয়ত আইনে অহিয়তনামা বলে। অহিয়তনামা রেজিস্ট্রি করার
প্রয়োজন নেই। তবে অস্থিয়তকারীর মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট জেলা জজ আদালতের দাখিল
করে প্রবেট করাতে হয়। অমুসলিমগণ অছিয়ত- এর স্থলে উইল লিখে এ নমুনাব্যবহার
করতে পারেন। মুসলমান শরীয়ত আইনে এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি অহিয়ত করা যায়
না।
অছিয়তের শর্তঃউইল উইল সাতার মৃত্যুর পরকার্যকর হবে। উইল যেকেউ
গ্রহণ করতে পারেন। অছিয়তকারীর সকল সম্পত্তির ১/৩ বেশি প্রধান করা যাবেনা।
সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন যে কোন সাবালক ব্যক্তি উইল করতে পারবেন। উইলকারীর
ইচ্ছা সুস্পষ্ট ও সঠিকভাবে নির্ণভযোগ্য হতে হবে।
অছিরতের উদ্দেশ্যঃ উইল করা যায় (ক) বাক্তির উদ্দেশ্যে এবং (খ) ধর্মীয়
উদ্দেশ্যে। ব্যক্তির উদ্দেশ্যে করা উইল আবার দুই একার (১) ওয়ারিশের বরাবরে
উইল এবং(২) ওয়ারিশের নয় এমন ব্যাক্তি বরাবর উইল করা।
সাফ-কবালা দলিল
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী, সাফ কবলা যার ইংরেজি প্রতিশব্দ
হচ্ছে সেল স্ট্যাম্প বা বিক্রয় দলিল। আইনের সিডিউল বা তফসিলে ব্যবহৃত
Conveyance শব্দের যার বাংলা নাম হলো স্বত্ব হস্তান্তরপত্র বা
স্বত্বান্তরপত্র। তবে, স্ট্যাম্প আইনে Conveyance-এর প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী
যে দলিল দ্বারা কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক তার জীবদ্দশায় উক্ত সম্পত্তির
স্বত্ব বিক্রয়মূলে হস্তান্তর করেন এবং ঐরূপ দলিল স্ট্যাম্প আইনের তফসিলে
ভিন্ন কোন নামে অভিহিত হয়নি- ওই সকল দলিলকে বুঝায়। সাধারন কথায় কোন আর্থিক
মূল্যের বিনিময়ে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অন্য বাক্তির কাছে হস্তান্তর
বিষয়ক সম্পাদিত দলিলকে সাফ কবলা বা সেল স্ট্যাম্প। এই প্রকার দলিল কে ক্রেতা
ও বিক্রেতার মধ্যে মালিকানা বিনিময় চুক্তির আইনী দলিল বা আইনগত রেকর্ডও বলা
হয়ে থাকে যা ভূমি মন্ত্রানালয় এর দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। সাফ কবলা
দলিলের জন্য যা প্রয়োজনঃ
- সম্পত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
- দলিলের সমাপ্তি নির্দেশ করে এমন একটি তারিখ
- বিক্রেতার বা দাতার সঠিক তথ্য বা পরিচয়
- সাক্ষীর যথাযথ তথ্য বা পরিচয়
- ক্রেতা বা গ্রহণকারীর পরিচয় বা সঠিক তথ্য
ক্রয় কৃত জমির দলিলটি প্রস্তুত করার পরে, অবশ্যই বিক্রেতার স্বাক্ষর উক্ত
দস্তা বেশগুলোতে করতে হবে এবং উক্ত সম্পত্তি ক্রেতার নামে নিবন্ধিত করতে
হবে। আর বিক্রেতার স্বাক্ষর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সাব-রেজিস্ট্রারের
অফিসে অথবা রেজিস্টারের সামনে না এসে, বিক্রেতা পরিবর্তে বিক্রেতার একজন
প্রতিনিধি এ কাজ করতে পারেন। সাফ-কবলা দলিলের নিবন্ধন ফ্রি পরিষদের পর
বিক্রেতা ও তার উত্তরাধিকারীরা প্রপার্টির ওপর থেকে সমস্ত ক্ষমতা
হারাবেন এবং ক্রেতা প্রোপার্টির মালিক হয়ে যাবেন।
দানপত্র দলিল নমুনা ফরম
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী, দানপত্র দলিল হলো একটি আইনগত নথি
যা কোন নির্দিষ্ট জমি সম্পদ বা সম্পত্তির অংশ দান প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়ে
থাকে। দানপত্র দলিলের আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে সম্পত্তির
মালিকানা হস্তন্তর করে থাকে। কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান তার সম্পদ বা
সম্পদের অংশ প্রদান করলে, অবশ্যই তাকে একটি দানপত্র দলিল তৈরি করতে হবে। এই
দলিলটির মাধ্যমে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে
থাকে। দানপত্র দলিল তৈরিতে সম্পদের বর্ণনা এবং স্বাক্ষরের সাথে দাতার নাম ও
ঠিকানা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। দানপত্র দলিল একটি স্থায়ী নথি বা প্রমান পত্র
হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দানপত্র দলিল যারা ব্যবহার করেনঃ যারা অন্যদের কাছ থেকে সম্পত্তি
দান হিসেবে পেতে চান। যারা সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের আইনি প্রমাণ চান।
যারা অন্যদের সম্পত্তি দান করতে চান।
দানপত্র দলিলের সুবিধাঃ এটি সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের একটি
আইনি ও নিরাপদ উপায়।এটি সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য ব্যবহার করা
যেতে পারে। এটি দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
দানপত্র দলিল করতে যা যা প্রয়োজনঃ দান করা সম্পত্তির বিবরণ (যেমন ধরণ,
অবস্থান, মূল্য)। দাতা ও গ্রহীতার সঠিক নাম, ঠিকানা ও পরিচয়। সরকার
নির্ধারিত ফি। দানপত্র দলিলের খসড়া। দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর।
রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ অনুযায়ী দান দলিলটি কার্যক্রর হওয়ার চার মাসের মধ্যে
স্থানীয় কথা রেজিস্ট্রেশন অফিসে দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। যে দান দলিলটি
দাতার কাছে সম্পাদন করছেন তা অবশ্যই এবং কোন বিবেচনা ছাড়াই দাতার কাছে
সম্পাদন করতে হবে। অবশ্যই দাতাকে এই সকল আইনগত প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি গুলো
সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। দানের দলিলটি সম্পাদন করার আগে সম্পত্তির মালিকানা ও
সততার যাচাই করা উচিত।
ফ্ল্যাট বায়না নামা / বায়নাপত্র দলিল নমুনা ফরম
বর্তমানে বিভিন্ন জমি বা ফ্ল্যাট বাসা নেওয়ার ক্ষেত্রে বায়না নামা বা
বায়না পত্র দলিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬
অনুযায়ী বায়না নামা দলিল প্রতিটি চুক্তি মজবুত করতে সাহায্য করে। জমির
বায়না দলিল হলো এমন এক ধরনের আইনি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে জমি ক্রয় বিক্রয়
হস্তান্তর বা উপহার দেওয়ার সময় দুই দলের মধ্যেকার চুক্তি বা দলিল হিসেবে
কাজ করে। উক্ত বায়না নামার দলিলে সাধারণত জমির বিবরণ, অবস্থান, দাগ
নাম্বার, আয়তন, অবস্থান,ক্রেতা ও বিক্রেতা সহ, মৌজা প্রয়োজনের সকল তথ্যর
বিবরণ দেওয়া হয়ে থাকেন।
জমি বায়না দলিল প্রয়োজন কাদেরঃ যারা জমি কিনতে বা বিক্রি করতে চান,
যারা জমি বন্ধক রাখতে চান, যারা জমি লিজ বা ভাড়া দিতে চান,যারা জমি
উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন।
জমি বায়না দলিলের সুবিধা সমূহঃ জমি কেনা-বেচার আইনি প্রমাণ। জমির
মালিকানা স্থাপনের প্রমাণ। ভবিষ্যতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে সাহায্য
করে। জমি বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। জমি লিজ বা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে
সহায়ক।
জমি বায়না দলিল করতে যা যা লাগবেঃ জমির মালিকানার প্রমাণপত্র (দাগ
নম্বর, খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি)। বায়না টাকার পরিমাণ নির্ধারণ। জমির বাজার
মূল্য নির্ধারণ। জমির বিক্রেতা ও ক্রেতার নাম, ঠিকানা, ছবি ইত্যাদি। দুইজন
সাক্ষীর নাম, ঠিকানা, ছবি। বায়না দলিল লেখার জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর
সহায়তা।
জমি বায়না দলিল লেখার নিয়মঃ জমি বায়না দলিল স্পষ্ট ও সাবলীল ভাষায়
লেখা উচিত। দলিলে জমির সঠিক বিবরণ থাকতে হবে। দলিলে বায়না টাকার পরিমাণ ও
পরিশোধের নিয়ম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। দলিলে জমির বিক্রেতা ও ক্রেতার
স্বাক্ষর থাকতে হবে। দলিলে দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
না-দাবি বা মুক্তিপত্র দলিল নমুনা ফরম
না দাবি দলিল হচ্ছে একটি আইনি দলিল। আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬
এর মাধ্যমে না দাবি দলিলের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি কোন সম্পত্তি বা অন্য কোন
অধিকারের উপর তার দাবি ত্যাগ করে থাকেন। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে এই দলিলের
মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার মালিকানাধীন বস্তু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন এবং অন্য
কারো ওপর তার অধিকার ছেড়ে দেন। কোন দলিলের দ্বারা নির্দিষ্ট সম্পত্তি
ব্যতীত অন্য কোন প্রকার দাবি৷ ত্যাগ করা হলে ওই দলিলকে না দাবি দলিল বা না
দাবি পত্র বলা হয়।
না-দাবি দলিলের আইনগত ভিত্তি, রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ রেজিস্ট্রেশন আইন
অনুযায়ী, না-দাবি দলিল একটি আইনগত দলিল এবং এটি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে
হবে। এই দলিলের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার স্বত্ব বা অধিকার ত্যাগ করেন।
মূল্যবিহীন হস্তান্তর: সাধারণত, না-দাবি দলিল সম্পাদন করা হয় কোনো মূল্য বা
ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। ভবিষ্যতের দাবি বাতিল: এই দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে
ওই সম্পত্তির উপর বা অধিকারের উপর কোনো দাবি উত্থাপন করা থেকে বিরত থাকা যায়।
অন্যান্য দলিলের পরিপূরক: না-দাবি দলিল, অন্যান্য সম্পত্তি হস্তান্তর দলিলের
(যেমন, সাফ-কবলা, দানপত্র) সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে এবং সেগুলোর
কার্যক্রমকে সমর্থন করে।
না-দাবি দলিল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। এটি সাধারণত কোনো সম্পত্তি
বা অধিকারের উপর নিজের দাবি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই দলিল
ভবিষ্যতে কোনো বিতর্ক বা বিরোধ এড়াতে সহায়তা করে। না-দাবি দলিল
সম্পাদনের আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জমির দলিল লেখার সরকারি নিয়ম ২০২৫-২৬
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী জমির দলিল লেখার জন্য
অবশ্যই কিছু সরকারের নিয়ম ও শর্ত অনুসরণ করে চলতে হবে। কারণ জমির দলিলই হলো
একমাত্র আইনগত দলিল বা ডকুমেন্ট যার মাধ্যমে আপনার জমির মালিকানা নির্ধারণ
করা সম্ভব। জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য এটি একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ
স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জমির দলিল লেখার সরকারি নিয়ম নিচে
উল্লেখ করা হলোঃ
- দইয়ের ফরমেট নির্ধারণঃ রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ধারা ৩ অনুযায়ী দলিলের ফরমেট নির্ধারণ করতে হবে। আপনি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনও ফরমেট ডাউনলোড করে নির্ধারিত কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
- দলিলের ধরণ নির্ধারণঃ সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী দলিল নির্ধারণ করতে হবে, আপনার কাজের জন্য কোন ধরনের দলিল প্রয়োজন। যেমনঃ হেবা দলিল, অছিয়ত নামা দলিল, বিক্রয় দলিল, না দাবি দলিল, বায়না পত্র দলিল, দানপত্র দলিল, কবলা দলিল।
- স্ট্যাম্প পেপার সংগ্রহঃ দলিল লেখার জন্য মূলত প্রয়োজন স্ট্যাম্প পেপার। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যান পেপার ক্রয় করে সংগ্রহ করতে হবে।
- লটারি পাবলিক দ্বারা স্বাক্ষরিতঃ দলিলটি নোটাই পাবলিক দ্বারা স্বাক্ষরিত ও প্রত্যয়িত করতে হবে।অনেক সময় এই কারণে অনেক ক্রেতা প্রতারিত হয়ে থাকে।
- দলিল লেখার নিয়মঃ দলিলটি সঠিকভাবে লিখতে হবে, যাতে জমির সমস্ত বিবরণ, ক্রেতা-বিক্রেতার সমস্ত বিবরণ স্পষ্ট ভাবে যেন উল্লেখ থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশনঃ দলিলের কাজ সম্পন্ন হবার পর উক্ত দলিল দলিলটি স্থানীয় সাব লিস্টের অফিসের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
শেষ কথাঃ আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬
আধুনিক দলিল লেখার নিয়ম ২০২৫-২০২৬ অনুযায়ী জমির দলিল লেখার সময় অবশ্যই
সরকারি নিয়ম ও নীতিমালা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিটি দলিল
সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। যদি সঠিক নিয়ম
অনুযায়ী দলিল লেখা না হয় এবং রেজিস্ট্রেশন করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আইনগত
জটিলতা দেখা দিতে পারে। আশা করি এই ব্লকটি পড়ে আপনার দলিল সংক্রান্ত সকল
তথ্য বুঝতে সাহায্য করবেন।
নোন ফ্যাক্ট ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url