দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কার্যকরী ও স্বাস্থ্যকর উপায়
মানব জীবনের সব থেকে বড় নিয়ামত হচ্ছে সুস্বাস্থ্য। একজন স্বাভাবিক মানুষের জন্য
যেমন অতিরিক্ত ওজন ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। ঠিক তেমনি কম ওজন থাকলে
শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম প্রোটিন ও পুষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা অতি
অবশ্যক।
দ্রুত উপায়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকেই ঔষধ এর সাহায্য নিয়ে থাকি ফলে তাদের দেহের ক্ষতি সাধিত হয়। আজকের ব্লগে কি করে ও কি কি উপায়ে আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধি করবেন ও
সুস্বাস্থ্য অধিকারী হবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। অবশ্যই কাজ শরীরের জন্য ক্ষতিকর সে সম্পর্কে আমরা অবগত হবো।
পেট সূচিপত্রঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কার্যকরী ও স্বাস্থ্যকর উপায়
- ওজন কম থাকার কারণে কী কী ?
- ভিটামিন ও মিনারেল ওজন বাড়ানোর কাজে ভূমিকা
- ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট
- খালি পেটে সকালে খেয়ে মোটা হওয়ার উপায়
- কোন কোন সবজি খেলে দ্রুত ওজন বাড়ে
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
- ওজন কমানোর অভ্যাসগুলো বাদ দিন
- ঔষধের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর উপকার ও অপকার
- শেষ কথাঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়
ওজন কম থাকার কারণে কী কী ?
কোন ব্যক্তির বি এম আই বের করতে চাইলে উক্ত ব্যক্তির কাঙ্খিত ওজনের সাথে ওই
ব্যক্তির উচ্চতার বর্গ দ্বারা ভাগ করলে উক্ত ব্যক্তির বিএমআই পাবেন। শুধু
বিয়ামের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি সুস্থ আছে কিনা তা বোঝা যায় না। বিএমআই দ্বারা
আপনার স্বাস্থ্য ও আপনি কোন স্তরের ওজন বিভাগে রয়েছেন তা সম্পর্কে জানা যায়।
বডি মাস ইন্ডেক্স এর মাধ্যমে একজন পুরুষের স্বাভাবিক হচ্ছে ১৮.৫ থেকে ২৪.৯, একইভাবে মহিলাদেরও স্বাভাবিক
বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯। তবে এর বেশি যদি বিএমআই হয় তাহলে স্থুলতা বৃদ্ধি পাবে
আবার এর ১৮.৫ এর নিচে যদি হয় তাহলে হবে ও বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে। ওজন কমে
যাওয়ার বা কম থাকার বিভিন্ন কারণ রয়েছে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য
কারণ গুলো। যেমনঃ
- ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়া
- ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া
- দুশ্চিন্তার কারণ বা মানসিক সমস্যা
- অপর্যাপ্ত ঘুম
ক্যান্সার আক্রান্তঃ ক্যান্সার আক্রান্তের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে তার মধ্যে ওজন কমে যাওয়া এক ধরনের লক্ষণ। ক্যান্সার আক্রান্ত হলে ওই ব্যক্তি বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখা দেয় যেমনঃ মুখের সমস্যা, বদজন, ক্লান্তি, খাবার খাইতে সমস্যা হয় ইত্যাদি কারণে যখন সেই ব্যক্তি খাইতে যাই তখন তার বিভিন্ন ধরনের দুর্গন্ধ আসে যার ফলে সে খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলে। পর্যাপ্ত পুষ্টি ভিটামিন না পাওয়ার জন্য দিন দিন তার ওজন হ্রাস পেতে থাকে।
ডায়াবেটিস আক্রান্তঃ ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের
দেহে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ফলে তাদের শরীর গুরুতর অবস্থায় চলে যায়।
ইনসুলিন কি? ইনসুলিন হচ্ছে এক ধরনের চাবি যা শরীরের ভেতরে শর্করা প্রবেশ করে। দেহের ভেতর রক্তের মাধ্যমে কোষ গুলোতে প্রবেশ করে, এবং মানুষের শরীরে শক্তি
আসে সেই কোষ গুলোর মাধ্যমে। আমাদের শরীরে শর্করা ঘাটতির কারণে ইনসুলিনের তারতম্যে
তৈরি হয়।
যার ফলে শরীরের অস্বাভাবিক বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যেমন ওজন
কম থাকা। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে শরীরে গ্লুকোজ এর ঘাটতি। যখন শরীরে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ
পাওয়া যায় না তখন শরীর শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য
দেহের চর্বি পুরানো শুরু করে এবং ওজন দিন দিন কমতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
দুশ্চিন্তার বা মানসিক সমস্যাঃ বর্তমান সময়ে ওজন হ্রাস সবার মাঝে
স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে অপরদিকে এই স্বাভাবিক অবস্থা কিছুদিন পর তাদের জন্য
বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সবাই
কর্মজীবী হচ্ছে এবং নিজ পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফলে বিভিন্ন প্রজেক্ট বা কাজের চাপ থাকছে, এসব চাপ ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব
ফেলে। যেসব কারণে বিভিন্ন মানসিক ও শারীর সমস্যা দেখা দেয়। এসব চাপের ফলে
সৃষ্টি হয় বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। এসব কারণে ব্যক্তির
খাবারের আগ্রহ হারিয়ে যাই যার ফলে দেহের গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয় ও ওজন কমে
যায়।
অপর্যাপ্ত ঘুমঃ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক সুস্থভাবে দিন পার করার জন্য তার
শরীরের বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে শরীরের বিশ্রাম দেওয়ার
সময় হয়ে ওঠে না, ফলে শরীরে ক্লান্তি দেখাবেন। একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন রয়েছে। এই সময়টুকু
সঠিকভাবে বিশ্রাম না নিলে সারাদিন শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয় এবং মস্তিষ্কে
বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে ফলে ওই ব্যক্তির ওজন কমতে থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এসব সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে কি কি উপায়ে নিজেকে চাপমুক্ত ও রোগমুক্ত রাখা যায় সে ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে তবে আমরা সঠিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থ দেহের অধিকারী হবো।
ভিটামিন ও মিনারেল ওজন বাড়ানোর কাজে ভূমিকা
স্থায়ী ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য ভিটামিনের বিকল্প নেই। আমাদের দেহে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনের প্রয়োজন হয় শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে, বড় হওয়া
দেহের ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত আমরা খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন গ্রহণ
করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে যে ভিটামিন গুলো আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন তা আমরা খাবারের
মাধ্যমে পায়না ফলে আমরা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ভিটামিন ট্যাবলেট অথবা সিরাপ
খেয়ে থাকি।
অনেক গবেষক ভিটামিন ডি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং দেহের স্বাস্থ্য
ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি গ্রহণের ফলে হাড় মজবুত হয় ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি
গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যাদের ওজন কম তাদের জন্য ভিটামিন
দিয়ে গ্রহণ করা খুবই উপকারী
ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের ওজন বৃদ্ধি পেতে
সাহায্য করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব খাবার খেয়ে থাকি ওইগুলো খাবারে সব ভিটামিন পাওয়া
যায় না। গবেষকদের মতে আমাদের খাবারে প্রায় ৪ থেকে ৫ ধরনের আলাদা আলাদা ভিটামিন
জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন ও মিনারেল কিভাবে ওজন বৃদ্ধির সাহায্য করে আসুন
তা জেনে নিন।
ভিটামিন ডি, বি, কে, এ, ইঃ যেসব ভিটামিন চর্বিতে মিশে এবং হাড় শক্ত করতে সাহায্য
করে ও মাসালস্ বা পেশি তৈরিতে সাহায্য করে সেগুলো হলো ভিটামিন ডি, কে, এ,
ই। এই ভিটামিন গুলো যেমন হাড় শক্ত করে ও বেশি শক্তি বাড়ায়। ঠিক তেমনি এগুলো ওজন বৃদ্ধিতেও খুবই কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
ওজন বৃদ্ধির জন্য খুবই ভালো ভিটামিন বি। ভিটামিন বি এর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো বি1, বি6, বি12 ভিটামিন। ভিটামিন বি এর এই সব ভাগগুলো শরীরের
শক্তি তৈরি করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। যা ওজন বৃদ্ধির জন্য খুবই দরকারি।
খনিজ উপাদানঃ খনিজ উপাদান ওজন বৃদ্ধিতে উপাদান গুরুত্ব অন্যান্য ভিটামিন
গুলোর থেকে অনেক বেশি। খনিজ উপাদানের রয়েছে আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও
ক্যালসিয়াম। খনিজ উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে হাড় গঠন হয় ওজন বাড়াতে সাহায্য করে,
রক্তের ঘনত্ব বা হিমোগ্লোবি বাড়িয়ে শক্তিশালী করে এবং দ্রুত হজমের সাহায্য করে
ও খিদে বাড়াই।
ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট
ওজন বাড়ানোর জন্য ডায়েট চার্ট এর কোন বিকল্প নেই। ওজন বাড়াতে চাইলে অবশ্যই
একটা নিয়ম পালন করতে হবে ও একই নিয়মে নিজের জীবন ছলনা করতে হবে। ওজন বাড়ানোর
জন্য ডায়েট চার্ট করে অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ওজন বাড়ানোর জন্য সকালে
নাস্তা দুপুরের ও রাতের খাবার এবং হালকা নাস্তা কি হিসাবে ও কিভাবে খাবেন তা তুলে
ধরবো।
সকালের নাস্তাঃ বর্তমান প্রজন্মে এটি খারাপ দিক হচ্ছে সকালের নাস্তা
না খাওয়া। এই কারণে ভিটামিনের ঘাট দেখা যায় দেহে। ওজন বাড়ানোর জন্য কিছু
খাবার সকালের নাস্তা যোগ করতে পারেন দুধ, কলার, ডিম খেজুর।
- কলাঃ কলা তে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও ভিটামিন বি ৬ রয়েছে যার ফলে দেহের রোগ প্রতিরক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। লোভ হয় বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায়।কার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে পোলাটা এড়িয়ে গেলেও সমস্যা নাই।
- দুধেঃ দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রচুর থাকে ফলে, প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান দুধের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পেয়ে থাকি দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি ১২, যার ফলে দেড় হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে।
- ডিমঃ ডিমকে সকল ভিটামিনের উর্ধ্বে ধরা হয়। কারণ ডিমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। ডিমে থাকা ভিটামিন উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভিটামিন বি২ ও ভিটামিন এ, যা আমাদের ত্বককে এবং চোখ ভালো ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বাজারে ডিম সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় ও সব জায়গাতেই এর সরবরাহ রয়েছে তাই সকালে খাবারের সাথে একটা ডিম খেলে ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- খেজুরঃ খেজুরে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম যা দাঁত হাড়ের জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য। আপনি চাইলে যে কোন সময় খেজুর খেতে পারেন কিন্তু যদি আপনি সকালে তিন থেকে চারটা খেজুর খাইতে পারেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।
দুপুরের খাবারঃ দুপুরের খাবার এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আমাদের সকালের খাবার খাওয়ার ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে হবে। যদি এই সময় খাবার গ্রহণ না করি তাহলে শরীরে ভিটামিন, ক্যালসিয়ামের ও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিবে শরীর থেকে চর্বি কেটে প্রোটিন সংগ্রহ করা শুরু করবে। দুপুরের খাবারে উল্লেখযোগ্য রাখতে হবে প্রোটিন বা আমিষ যেমন মুরগি মাংস, খাসি মাংস, ডাল,গরুর মাংস, টক দই, মিষ্টি দই ইত্যাদি।
রাতের খাবার ও হালকা নাস্তাঃ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার মাঝে
সকল ধরনের খাবার বা ভিটামিন গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। ফলে যেগুলো খাবার আমরা
দুপুরে খেতে পারি না এগুলো আমরা রাতে খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারি। রাতে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা গ্রহণ করতে পারি যেগুলো স্বাস্থ্য যেন ক্ষতিকর হবে না
শুধু সেগুলোই গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ পেস্তা বাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস, মিষ্টি
কুমড়ার বীজ, তিসির বীজ সূর্যমুখীর বীজ।
আরো পড়ুনঃ
খালি পেটে সকালে খেয়ে মোটা হওয়ার উপায়
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ও ওজন বজায় রাখার জন্য সুস্থ জীবনধারার কোন বিকল্প
নেই। আমরা আশেপাশে দেখলে জানতে পারবো সমাজে অনেকেই রয়েছে যারা ওজন
বাড়াতে চাই ও কিছুসংখ্যক মানুষ আছে যারা ওজন কমাতে চাই। শরীর ভালো রাখা ও দেহে
শক্তি বজায় রাখার জন্য সকালে খাবার খাওয়া জরুরী। সকালের নাস্তা ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনাকে অনেক ভালো বেনিফিট প্রদান করে থাকে।
অনেকের মধ্য একটা ভুল ধারণা রয়েছে অতিরিক্ত,
খাবার গ্রহণ করলে হয়তো আমাদের ওজন
বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু এটি একদমই ভুল ধারণা। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে যদি
আমরা পুষ্টিগড় ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওজন বাড়াতে আজও
করবে। অনেকেই অনেক চেষ্টা করেন ওজন বাড়ানো কিন্তু তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে
পারেন না। এর কারণ হলো সঠিক খাদ্য নির্বাচন না করতে পারা। কি কি খাদ্য তালিকা যোগ
করলে একজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে তা জেনে নেওয়া যাক।
- চিয়া সিড
- ভেজানো বাদাম
- বানানা শেক
- গুড়ের পানি
- ড্রাই ফ্রুটস
চিয়া সিডঃ চিয়া সিড খেলে অবশ্যই ওজন বাড়বে কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টি গুণ(প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম) রয়েছে আরো রয়েছে স্বাস্থ্যকর
চর্বি উপাদান। ফলে চিয়া সিড একটু বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধি করার জন্য খুব
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভেজানো বাদামঃ বাদাম, বাদাম শব্দটি শুনলে আমরা সাধারণত চিনাবাদাম কে
চিনে থাকি। কিন্তু পৃথিবীতে খাবার যোগ্য বাদাম রয়েছে চার ধরনের হলো কাঠবাদাম,
চিনাবাদাম, পেস্তা বাদাম, কাজুবাদাম। এ সকল বাদাম যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি
আলাদা আলাদা প্রোটিন ও ভিটামিন। বাদাম এমন এমন কিছু গুণ রয়েছে যা আপনাকে আশ্চর্য করে তুলবে যারা নিয়মিত বাদাম
খায় তাদের দীর্ঘায়ু হয়েছে।
আপনি যদি বাদাম খান ওজন বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই খেয়াল
রাখবেন বাদাম খাওয়ার পর পানি খাবেন না এটা বাদামের গুণাবলী নষ্ট করেন। বাদামে অনেক ফ্যাট রয়েছে তবে সব বাদামে নয় বিশেষ করে চিনা বাদাম এবং কাজু বাদাম
ফ্যাটের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তাই আমরা বলতে পারি ওজন বাড়াতে বাদাম আপনার
জন্য একটি স্বাস্থ্য করি উপায় হতে পারে।
ড্রাই ফ্রুটসঃ ড্রাই ফুডস খেতে কার না ভালো লাগে কিন্তু আপনি কি
জানেন ড্রাই ফুডস উপকারী। ড্রাই ফুটছে রয়েছে সব থেকে বেশি ক্যালোরি। আপনি যদি
ড্রাই ফুড বেশি খান তাহলে ওজন এটি খুব ভালো ও কার্যকর প্রভাব ফেলবে।
ড্রাই ফুড এমনিতেই ক্যালোরি যুক্ত খাবার এরপরও যদি কেউ আলাদা উপায়ে এটি মিষ্টি
করে থাকে তাহলে এর ক্যালর পরিমাণ হেরে যাবে ও আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে যা স্বাস্থ্য
ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে। ড্রাইপোর্টস গুলো হল বাদাম কিসমিস, খেজুর, জয়তুন, চিয়া
সিড, তিল, বিভিন্ন ধরনের উপকারী বীজ। এগুলোর আলাদা আলাদা উপকার রয়েছে।
আলু সিদ্ধ বা ভাজাঃ আলু এমন একটি সবজি যা সকল সবজির সাথে
রান্না করা যায়। এমন কোন বাঙালি নেই যে আলু খায় না। আলু বা পটেটো দিয়ে বিভিন্ন
রকমের রান্না করা যায়। অনেকেই মোটা হওয়ার ভয়ে আলু খায় না। কিন্তু যাদের রোগা
দেহ তার জন্য আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
বিশেষ করে আলু এর জন্য খাওয়া ঠিক নয় যাদের ডায়াবেটিস,ওবেসিটি মতো সমস্যা
রয়েছে। কারণ আলোতে রয়েছে সুগার এবং দেহের সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে। যা
আমাদের ওজন বৃদ্ধি করে কিন্তু অধিক পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরের ক্ষতি সাধন করে।
বানানা শেকঃ যাদের শরীর দুর্বল এবং ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য একটি
কার্যকরী উপায় হল বানানা শেক/কলা শেক গ্রহণ করা। কলা তে রয়েছে ক্যালোরি যা সঠিক
ব্যায়াম এর সাথে মিলে পিসিকে শক্তিশালী করে। আপনি যদি কলা শেক এর সাথে কিসমিস বাদাম মধু উপাদান যোগ করেন তাহলে এর গুণাবলী আরো
বৃদ্ধি করবে।
কলার পুষ্টিগণতার কারণে যাদের ওজন বেশি তারা এটিকে এড়িয়ে চলেন
কারণ এর ফলে তাদের ওজন আরো বৃদ্ধি পাবে। আপনারা সঠিকভাবে সঠিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করবেন। ফলে আপনাদের ওজন যেমন বাড়বে
ঠিক তেমনি সুস্বাস্থ্য অধিকারী হবেন। কোন কিছুই অতিরিক্ত করা ঠিক নয় তাই সবকিছুই
পরিমাণ নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে।
কোন কোন সবজি খেলে দ্রুত ওজন বাড়ে
অনেকের মনে প্রশ্ন ও আমাদেরও প্রশ্ন করে থাকেন। কোন ধরনের সবজি খেলে ও কি কি সবজি
খেলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে? আমাদের দৈনন্দিন যে খাবারের রুটিন সেই রুটিন
অনুযায়ী আমাদের সকল ক্যালসিয়াম, প্রোটিন যুক্ত সবজিগুলো বেশি খেতে হবে। দৈনন্দিন একই নিয়ম রুটিনটি পালন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আমাদের খাবারের
তালিকায় যেন সব ধরনের ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
বাজারে অনেক ধরনের সবজি
পাওয়া যায় যেগুলোতে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে এগুলো বেশি খেলে খুব দ্রুত
ওজন বৃদ্ধি পাবে। আপনার খাদ্য তালিকায় অধিক ক্যালসিয়াম আছে ওই সব খাবার যুক্ত করতে পারেন। যেমনঃ
মিষ্টি আলু ,মিষ্টি কুমড়, মুলা, গাজর,কচু্, বরবটি, মটরশুটি এ জাতীয় সবজি শরীরে
অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম জগাই ও ওজন বৃদ্ধি করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ সহায়িকা
হিসেবে কাজ করে।
দ্রুত ওজন বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার
ওজন বাড়াবেন ও চর্বির কিছু খাবার খাবে না তা কি করে হয়। আমরা বিভিন্ন ধরনের
চোখ যুক্ত খাবার দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণ করি। সাধারণত আমরা আমিষ থেকে চর্বি যুক্ত
খাবার পেয়ে থাকি। এছাড়াও আরো অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমেও চর্বিযুক্ত খাবার
গ্রহণ করে থাকি। কয়েকটি চর্বি জাতীয় খাবার উল্লেখ করা হলো যা আমাদের বাড়ির বাসা বাড়িতে
পাওয়া যায় ও সহজ লভ্য। যেমনঃ বাদাম, বীজ, জলপাই, তেল, চর্বিযুক্ত মাছ,
নারিকেল, পনির, ডিম, জলপাই ইত্যাদি।
দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
ঘুম মানবদেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কোন ব্যক্তির পর্যাপ্ত ঘুম না
হয় ওই ব্যাক্তির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। ঘুম না হওয়ার
কারণে ব্যক্তির পেশি গঠনের ভালো বাধাগ্রস্ত হবে। যদি পর্যাপ্ত ঘুম তাহলে পেশির
হার ও কমবে এবং শরীর দুর্বল থাকবে। পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে আমাদের দেহে প্রধান নিয়ন্ত্রণ কারী হরমোন নিয়ন্ত্রন করে,
ফলে শরীর ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন আমাদের দেহে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
যা
ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির প্রতিদিন
সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত ফলে ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে সাহায্য করবেন। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় অবলম্বন করতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট
সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন এবং এটি প্রতিদিন পালন করবেন। যদি সম্ভব হয় আপনি
ঘুমানোর আগে মেডিটেশন অথবা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে নিতে পারেন। ঘুম
যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পানি খেয়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ
ওজন কমানোর অভ্যাসগুলো বাদ দিন
অনেকেই স্থূল দেহ পছন্দ করেন না। এর ফলে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের হ্রাস ঘটে।
অন্যদিকে ওজন একবার বাড়লে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি বা জন্ম হয়। আপনার উচ্চতা
অনুযায়ী আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে ফলে যদি আপনার স্হূল দেহ হয় অবশ্যই
আপনাকে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়াতে হবে। আরে উচ্চতা বাড়ানোর জন্য আপনারা
কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন।
- আমাদের দৈনন্দিন কাজের অন্য আমাদের খাবারের সিডিউল মেনটেইন করতে পারিনা। খেয়াল রাখতে হবে আমাদের প্রতিদিনের ও প্রতিবেলার খাবারটা যেন একই নিয়মে ও একই সময়ে খেতে পারি।
- আপনার খাবারের রুচি কেমন তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যতটুক প্রতিদিন খেতেন তার থেকে পরিমাণে একটু বেশি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ফলে আপনার দেহ আপনাকে শক্তি জগতে যতটুক প্রোটিন দরকার তা নিয়ে বাকি প্রোটিন গুলো আপনার ওজন বৃদ্ধির কাজ করবে।
- খাওয়ার সময় খাবারের দিক মনোযোগ রাখতে হবে অযথা ফোন বা টেলিভিশন দেখা যাবে না। যখন খাবেন চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করবেন, যাই খাবেন হজম হবে দ্রুত ও শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেয়েটার সাহায্য করবে।
- আপনার যদি রুচির সমস্যার জন্য খেতে সমস্যা হয় অতএব একবার বেশি খেতে পারেন না। তাহলে আপনি সেই খাবারটি একবারে না খেয়ে অল্প করে বারে বারে খাবেন।
- আপনি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন যেমন পায়েস পুডিং মিষ্টি ইত্যাদি। ফলে আপনার দেহে ক্যালোরি ঘাটতি পূরণ হবে, ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। ফলে আপনার দেহে ক্যালোরি ঘাটতি পূরণ হবে, ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
- যেসব খাদ্য খাদ রুচির ব্যাঘাত ঘটায়।ওই সকল খাবার ত্যাগ করতে হবে যাতে আপনার খাবারের প্রতি রুচিটা ভালো থাকে। যেমন মাত্র অতিরিক্ত চা পান, চানাচুর, তামাক, ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- আপনার যদি খাবারের রুচি কম থাকে তাহলে কিছু শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে যেমন কোন কাজ অথবা ব্যায়াম। ফলে আপনার ক্ষুধা লাগবে ও খাবারের জন্য আগ্রহ বাড়বে।
বর্তমানে দেখা যায় অধিকাংশ ছেলে মেয়ে ছাত্রাবাস থাকে ফলে তাদের ক্যালোরি
ঘাটতি থাকে সঠিক ও পর্যাপ্ত খাবার না থাকার কারণে। এই সমস্যা সমাধানে
আগে থেকেই অতিরিক্ত খাবার জোগাড় করে রাখতে হবে।
ঔষধের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর উপকার ও অপকার
ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকে অনেক পন্থা অবলম্বন করেন। কেউবা প্রাকৃতিকভাবে আবার
অনেকেই ঔষুধের সাহায্য নিয়ে থাকে। যদি কেউ ওষুধের মাধ্যমে ফাইবারে মোটা হতে
চান তাহলে আপনার অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলাপ আলোচনা করতে হবে। কারণ
একটি ভুল সারা জীবন কান্না হতে পারে। আপনার ওজন বৃদ্ধির নেশা ওষুধ সেবনের জন্য প্রভাবে ফেলতে পারে।
বর্তমানে অল্প
সময়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেক অভিনেতা ও বডি বিল্ডারা স্টেরয়েড বা হরমোন গ্রহণ
করেন। যার ফলে তাদের পেশি, হাড় খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তা ওজনের মাধ্যমে
বোঝা যায়। এসব ক্ষতিকর দ্রব্যের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর ফলে এক শরীরে এলার্জি রক্তচাপ
হাঁপানি রোগ দেহে বাসা বাধে।
এছাড়াও আরো রয়েছে বাজারে প্রচলিত হারবাল,
হাটে বাজারের টোকাইদের ভেষজ ঔষধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট, ডায়াবেটিস ঔষধ,
মানসিক ঔষধ ইত্যাদি। এসব গ্রহণের ফলে যেমন শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ঠিক তেমনি মানসিক ভাবিও
অনেক ক্ষতি করে থাকে। এসব ওষুধের মাধ্যমে ভিটামিন ক্যালসিয়াম ইত্যাদি
উপাদান আমাদের দেহে জগাই কিন্তু অপরদিকে খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
শেষ কথাঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়
আজকে আমারা জানতে পারলাম কি কি কারণে ওজন কমে ও কি উপায়ে আমরা স্বাস্থ্যসম্মত
ভাবে ওজন বৃদ্ধি করতে পারি। এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম কিভাবে কি
উপায়ে ওজন বৃদ্ধি করা যায়। যেসব উপায়ে আমাদের শরীরের ক্ষতি হবে ওইগুলো উপায়
এরিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ উপায়ে ওজন বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
আর ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরামর্শ
ছাড়া ওষুধ সেবন করলে যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে আপনার দেহের জন্য
খুবই ক্ষতি হবে। এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে প্রতিটি তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা
করেছি আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
নোন ফ্যাক্ট ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url